দখিনের খবর ডেস্ক ॥ সরকার বিকল্প উৎস থেকে আয় বাড়াতে চাচ্ছে। কারণ করোনা তাণ্ডবে দেশের ব্যবসা খাত বিপর্যস্ত। কমে গেছে মানুষের আয়। ফলে সরকারের আয়েও বিশাল ধাক্কা লেগেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের পক্ষ থেকে নতুন আয়ের উৎস হিসেবে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোতে থাকা উদ্বৃত্ত অর্থ এবং বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিলকে টার্গেট করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ওই দুই খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি আয় হতে পারে। ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে অর্থবছরের শেষপর্যায় প্রায় সমাগত। কিন্তু অর্থবছরের গত ৮ মাসে এনবিআর রাজস্ব আদায় করেছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। বাকি সময়ে এনবিআরকে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা আদায় করতে হবে। যা প্রায় অসম্ভব। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ঘাটতি প্রায় ৩১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আশঙ্কা করা হচ্ছে অর্থবছর শেষে ওই ঘাটতি ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। অথচ সরকারের আয়ে বড় ঘাটতি থাকলেও ব্যয়ের লিস্ট কমছে না, বরং বাড়ছেই। আর কৃচ্ছ্রসাধনের সময় বাড়িয়েও লাভ হচ্ছে না। সূত্র জানায়, দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচন এবং করোনা অভিঘাত মোকাবেলা করে উচ্চতর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারায় প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রয়োজন ব্যাপক বিনিয়োগ। কিন্তু সরকারের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত এখনো কম রয়েছে। সেজন্যই বিনিয়োগের জন্য অর্থায়নের নতুন উৎস অনুসন্ধান জরুরি হয়ে পড়েছে। আর ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় নতুন উৎস খুঁজেও পেয়েছে। প্রথম উৎস হিসেবে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোতে থাকা উদ্বৃত্ত অর্থ আরো বেশি করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ৬৮টি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আরো বেশি অর্থ কিভাবে আনা যায় সে পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ওসব প্রতিষ্ঠান থেকে ১৬ হাজার ৪৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে চলতি অর্থবছরে ওই খাত থেকে ১৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আসতে পারে। আর দ্বিতীয় উৎস হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিলকে টার্গেট করছে। ওই তহবিলের মাধ্যমে রিজার্ভের অর্থ উন্নয়ন কার্যক্রমে ব্যবহার করা হবে। প্রাথমিকভাবে লাভজনক হিসাবে বন্দর এবং বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে। বছরে সর্বোচ্চ ২ বিলিয়ন ডলার বা ১৬ হাজার ৯২৩ কোটি ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করা হবে। ওই খাত থেকে প্রতি অর্থবছর ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হতে পারে। এদিকে অর্থনীতিবিদদের মতে, রিজার্ভের অর্থে খুব বেশি চাপ দেয়া ঠিক হবে না। স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো এখন ভালো অর্থ দিচ্ছে, পরে যে পারবে তার নিশ্চয়তা কী? তাই বিকল্প উৎস যাওয়ার আগে এনবিআরকে চাপ দিতে হবে। করের জাল বাড়াতে হবে। এনবিআরকে আধুনিকায়ন করতে হবে। এদেশে এতো বড় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) দরকার নেই। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দিতে হবে। ব্যয় কমাতে হবে। তাতে দীর্ঘমেয়াদি সুফল আসবে। অন্যদিকে এ ব্যাপারে অর্থ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, রাজস্ব আয় নিয়ে অর্থ বিভাগ চিন্তিত। তবে যেহেতু তা আপাতত বাড়ানো যাচ্ছে না, সেজন্যই বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে। বিকল্প খাতগুলো থেকে প্রত্যাশিত মাত্রায় অর্থ পাওয়া গেলে ব্যয় নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না।
Leave a Reply